সোমবার, ১লা সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ গঠনে সিইসির আশ্বাস *** তিন দলের তিন মত, ফেব্রুয়ারিতেই ভোট করতে অনড় সরকার *** চীন সফর শেষে দেশে ফিরলেন এনসিপির নেতারা *** মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতিকে ধারণ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে: হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ *** কেউ যদি নির্বাচনের বিকল্প নিয়ে ভাবে, সেটা হবে জাতির জন্য গভীর বিপজ্জনক: প্রধান উপদেষ্টা *** জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে আলোচনা হয়নি: বিএনপি *** ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ *** ট্রাম্পের শুল্কের যে প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের ১৫ হাজার গার্মেন্টসে *** বিস্ফোরণ-গুলি-ড্রোনের শব্দকে শ্রুতিমধুর সংগীতে রূপান্তর করছেন গাজার শিল্পী *** অশান্ত বিশ্বে সি–মোদির বন্ধুত্বের বার্তা

‘আসন্ন নির্বাচন হবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ’

এসএম শামীম

🕒 প্রকাশ: ০৪:২৯ অপরাহ্ন, ২৩শে আগস্ট ২০২৫

#

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ ক্রমেই বাড়ছে, যা নির্বাচনের পরিবেশকে জটিল ও অনিশ্চিত করে তুলছে। এছাড়া প্রশাসনের ভূমিকা, ভোটের স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তা নিয়েও রয়েছে উদ্বেগ। সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে মনে করেন, এবারের নির্বাচন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

গতকাল শুক্রবার (২২শে আগস্ট) বাংলাভিশনের জনপ্রিয় টকশো ‘ফ্রন্টলাইন’র একটি ভিডিও তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেজে প্রকাশ পায়, যা শনিবার (২৩শে আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ দর্শক দেখেছেন। সেখানে গোলাম মাওলা রনি নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তৃত মন্তব্য করেন, যা দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।

গোলাম মাওলা রনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমি যেহেতু সরাসরি বেশ কয়েকবার মাঠে নির্বাচন করেছি, আমার কাছে ভয় হচ্ছে—২০২৪ সালের মতো একটি ‘ডামি নির্বাচন’ নয়, এবার আরও ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হতে যাচ্ছে।’

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, দেশের জেলা শহর, বিভাগীয় শহর, উপজেলা ও তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির প্রভাব ব্যাপক। তিনি উল্লেখ করেন, ‘ঢাকা শহরের অফিস-আদালতে জামায়াত কিংবা বিএনপির কিছু প্রভাব থাকলেও, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত—বিএনপি ছাড়া কিছু নেই। এটি হোক টেম্পু স্ট্যান্ড, ইউনিয়ন কমিটি বা যেকোনো স্থানীয় সংগঠন—সবই বিএনপির নিয়ন্ত্রণে।’

রনি অভিযোগ করেন, বিএনপির অভ্যন্তরেই তিন থেকে চারটি করে কমিটি রয়েছে এবং এদের মধ্যে হানাহানি চলছে। এই কমিটি দ্বন্দ্বের জের ধরে তিনি দাবি করেন, ‘কমিটি-ভিত্তিক বিরোধে ইতিমধ্যে প্রায় ৩০০টি খুন হয়েছে, কয়েক হাজার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, আর এসব কারণে বিএনপি বহু নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করলেও সহিংসতা থামেনি।’

তিনি বলেন, ‘অনেকেই ভাবছে—চেয়ারম্যান, মেম্বার হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাঁচ বা দশ বছর অপেক্ষা না করে, এক মাসের মধ্যেই যদি আওয়ামী লীগের সম্পদ দখল করে ১০ গুণ আয়ের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে বিএনপিতে থাকা না থাকায় কী আসে যায়?’

আওয়ামী লীগের সাবেক নেতাদের দেশত্যাগ প্রসঙ্গে রনি বলেন, ‘যারা আওয়ামী লীগ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন— ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, মেয়র জাহাঙ্গীর, শামীম ওসমান, শেখ তাপস কিংবা ছাত্রলীগের প্রথম সারির নেতারা—তারা কেউই ধরা পড়েননি। তারা নিরাপদে কলকাতায় চলে গেছেন। সেখান থেকেই তারা এমন কিছু করার চেষ্টা করছেন, যাতে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষরা দেশে স্থিতিশীল অবস্থায় না থাকতে পারে।’

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, নির্বাচনের সময় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে যেতেও বাধা দেওয়া হতে পারে। তার ভাষ্যে, ‘দেখা যাবে অনেকে সদরঘাট বা মাওয়া ঘাট পর্যন্ত যেতে পারবে না। পদ্মা নদীতে ফেলে দেওয়া হবে, আবার পদ্মা সেতুর উপর থেকেও গাড়িসহ ফেলে দেওয়া হতে পারে। এমন ঘটনা ২০২৪ সালেও ঘটেছে, তবে এবার আরও ভয়াবহ হবে।’

গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘২০২৪ সালের প্রশাসন শেখ হাসিনার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে ছিল, কিন্তু এখন সেই অবস্থাটা নেই।’ 

বিএনপির ভবিষ্যৎ সরকার গঠনের সম্ভাব্যতা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন। তার মতে, ‘বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে প্রধানমন্ত্রী হবেন তারেক রহমান। কিন্তু রাষ্ট্রপতি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা বাকি ৬০ জন মন্ত্রী কারা হবেন, তা জানা নেই। গত ১৫ বছরে দলকে সঠিকভাবে সংগঠিত করতে পারেনি, গত এক বছরেও পারলো না—তাহলে ক্ষমতায় গিয়েই কীভাবে সমাধান করবে?’

সামাজিক বাস্তবতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আগে বায়তুল মোকাররমের সামনে দোকান বসাতে ১০০ টাকা চাঁদা দিতে হতো, এখন লাগে ৫০০ টাকা। দোকানের সংখ্যা দ্বিগুণ হলেও বিক্রি নেই, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অর্ধেকে নেমে এসেছে। মূল দোকানগুলোতে কাস্টমার নেই, মরুভূমির মতো হয়ে গেছে।’

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘লোকে বলে—এই চাঁদার অর্থ যাচ্ছে পল্টন হয়ে লন্ডনে। বিএনপিকে এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে। শুধু জামায়াত বা চরমোনাই হুজুরকে দোষারোপ করলেই চলবে না—মাঠের আওয়াজ বুঝতে হবে।’

সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে রনি বলেন, ‘সেনাপ্রধান বলেছিলেন, ‘আমার উপর আস্থা রাখুন’, কিন্তু গত এক বছরে কি চাঁদাবাজি, দুর্বৃত্তায়ন বা আন্ডারওয়ার্ল্ড বন্ধ হয়েছে? এখনো কাওরান বাজার, তেজগাঁও ও বিভিন্ন ট্রাক স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি চলছে।’

সবশেষে তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে মানুষ স্বপ্ন দেখবে সুন্দর নির্বাচনের? যে নির্বাচনে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে যাবে? বাস্তবতা কিন্তু সেটি নয়।’

গোলাম মাওলা রনি

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন