রাজু আলাউদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত
রাজু আলাউদ্দিন
‘নোবেল পুরস্কারের অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে। এর পাশাপাশি মোট ১০ ধরনের পুরস্কার অর্থকে করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।’ এবারের বাজেটে (২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত) যদি নতুনত্ব কিছু থাকে, তবে এটাই। বাজেটে সাধারণত সেই সব জিনিসের প্রসঙ্গ আসে, যা বৃহত্তর বা ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী বা শ্রেণি ব্যবহার করে। কিন্তু নোবেল?
যেন প্রতি বছর বাংলাদেশিরা নোবেল পুরস্কার পেয়ে বাম্পার ফলন ঘটিয়েছে। অতএব, নোবেল রেমিটেন্স-এর উপর কর আরোপ না করে এবার মহত্ত্বের পরিচয় দিতে হবে! এ যে শুধুই ইউনূস সাহেবের (অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস) নোবেল পুরস্কারের টাকাকে করমুক্ত করার জন্য বাজেটে এমন প্রস্তাব আনা হয়েছে, তা এ ভোদাই বাঙালি ভালো করেই বোঝে।
ইউনূস সাহেব নোবেল-লরিয়েট, কিন্তু মোটেই নোবল ম্যান নন- নিজের পুরস্কারের টাকাকে করমুক্ত করার প্রস্তাব থেকেই বুঝা যায়। নিজের করমুক্তিকে বৈধতা দেওয়ার জন্য ‘র্যামন ম্যাগসাইসাই, বুকার, পুলিৎজার, সাইমন বলিভার, একাডেমি অ্যাওয়ার্ড, গ্রামি, এমি, গোল্ডেন গ্লোব, কান চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কারগুলোকেও’ অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছেন।
এগুলোর মধ্যে র্যামন ম্যাগসাইসাই ছাড়া বাকি একটিও বাংলাদেশি কেউ পেয়েছেন কীনা, সন্দেহ। তাহলে একজনের একটি মাত্র পুরস্কারের টাকাকে করমুক্ত করার জন্য একটিমাত্র ব্যক্তির বিষয়কে জাতীয় বাজেটের বিষয় করে নিতে হবে? এত ছোটলোক ও স্বার্থপর বাঙালি ছাড়া আর কে হতে পারে! ক্ষমতা পেলে বাঙালি কী না-করতে পারে!
ইতিমধ্যে তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) নিজের মামলাগুলো ক্ষমতাবলে নিষ্পত্তি করে নিয়েছেন। নিজের প্রশাসনে ভাতিজা, আত্মীয়স্বজন ছাড়াও, গ্রামীণ প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করে নেপোটিজমের প্রমাণ দিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে যেসবের জন্য অভিযুক্ত করা হয়, তার সবই তিনি ইতিমধ্যে করে ফেলেছেন। সফরে নিজের মেয়েকে অনাবশ্যকভাবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। মুরিদদের কাউকে কাউকে বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসে চাকরি দিয়েছেন।
আরও মজার ব্যাপার হলো, সাধারণ শিক্ষাখাতে বাজেট কমেছে, কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষাখাতে বাজেট বেড়েছে। বরাবরের মতো অপেক্ষাকৃত বিত্তবানদের ব্যবহার্য কিছু বিষয়ে কর কমেছে। অর্থাৎ, তিনি নিজের স্বার্থ ও বিত্তবানদের স্বার্থকে রক্ষার একটা বাজেট করেছেন। অথচ বিশ্বব্যাপী তার পরিচয় গরিবের বন্ধু হিসেবে। এর চেয়ে আইরনি আর কী হতে পারে!
এ রকম একটি লোক ক্ষমতায় বসে জাতির স্বার্থে কিছু করবে-এটা ভাবা আহাম্মকি ছাড়া কিছুই নয়। ছোটলোকি ও স্বার্থপরতার জন্য যদি নোবেল পুরস্কার থাকত, তাহলে বাঙালি হতো এর সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রাপক, বোধহয় প্রতি বছরই পেত, ঠিক যেমনভাবে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে প্রতি বছরই শীর্ষে থাকে।
লেখক: ন্যানো কাব্যতত্ত্বের জনক কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন