ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে কচ্ছপগতিতে। গত বৃহস্পতিবার (১১ই সেপ্টেম্বর) ভোট গ্রহণ শেষে রাত ১০টায় গণনা শুরু হয়। আজ শনিবার (১৩ই সেপ্টেম্বর) এখনো ভোট গণনা শেষ করে ফল ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। ফল প্রকাশে আরও কয়েক ঘণ্টা লেগে যেতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক লুৎফুল এলাহী বলেন, আজ (১৩ই সেপ্টেম্বর) দুপুর দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
গতকাল শুক্রবার (১২ই সেপ্টেম্বর) রাতের মধ্যে ফল ঘোষণা করা হবে বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ইতিমধ্যে তা ব্যর্থ হয়েছে। আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সংসদের ১৫টি হলের ভোট গণনা শেষ হলেও বাকি রয়েছে ছয়টি হল।
সিনেট ভবনে গিয়ে সকাল ১০টায় দেখা যায়, ছয়টি টেবিলে ৩৩ জন কর্মকর্তা নিরলসভাবে ভোট গুনছেন। তবে রাতভর কাজ করতে করতে সবার চোখে-মুখে ক্লান্তি স্পষ্ট।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ গণনা যেন কচ্ছপের গতিতে চলছে, রেকর্ড ধীরগতির ভোট গ্রহণ ও গণনার সাক্ষী হচ্ছে এবারের নির্বাচন।
কচ্ছপগতির ভোট গ্রহণ ও গণনা নিয়ে কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য না করলেও রোকেয়া হলের শিবির-সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের পোলিং এজেন্ট উম্মে হাবিবা বলেন, টানা তিন দিন ধরে কাজ করতে গিয়ে বিষয়টি অত্যন্ত ক্লান্তিকর হয়ে উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার দিনভর ভোট গ্রহণ শেষে রাত থেকে গণনা শুরু হয়। প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোট শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হলেও নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে রয়েছে—জামায়াতসংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে ব্যালট পেপার ও ওএমআর মেশিন সরবরাহ, অনুমতি থাকা সত্ত্বেও পোলিং এজেন্টদের প্রবেশে বাধা, ডোপ টেস্টের ফলাফল প্রকাশ না করা এবং নির্বাচন ‘ম্যানিপুলেট’ করার অভিযোগ।
ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার আগেই ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়। পরে ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) ‘সম্প্রীতির ঐক্য’, ‘সংশপ্তক পর্ষদ’, ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ ও ছাত্র ফ্রন্টের আংশিক প্যানেলও একই পথে হাঁটে। কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
এ ছাড়া দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম ও অধ্যাপক শামিমা সুলতানা। গতকাল শুক্রবার রাতে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তারও।
জাকসুর ২৫টি পদের জন্য ১৭৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদে ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৮ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ৬ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একই সঙ্গে ২১টি হল সংসদেরও নির্বাচন হচ্ছে।
ভোটে অংশ নিয়েছে আটটি পূর্ণ ও আংশিক প্যানেল। যদিও একাধিক প্যানেল ভোট বর্জন করেছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে আছে ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত ঐক্য ফোরাম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা আবদুর রশিদ জিতুর নেতৃত্বাধীন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন