ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নদীর পানিতে গিয়ে মিশছে। এতে হুমকির মুখে পড়ছে জলজ বাস্তুতন্ত্র, আর বাড়ছে ওষুধ–প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় এ উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে। এ বাস্তবতা বিশ্বজুড়ে কার্যকরী নজরদারি, সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আরও জোরালোভাবে সামনে এনেছে। খবর নিউজ মেডিকেল লাইফ সায়েন্সেসের।
কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত এ গবেষণায় উঠে এসেছে, বিশ্বের লাখ লাখ কিলোমিটার নদীপথে এমন মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের দূষণ দেখা যাচ্ছে, যা জলজ জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর। এটি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার ত্বরান্বিত করতে পারে।
গবেষণাটি প্রথমবারের মতো দেখিয়েছে, মানুষের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে সারা বিশ্বে নদীগুলো কতটা দূষিত হচ্ছে। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে মানুষ যে পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে, তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ—অর্থাৎ প্রায় ৮ হাজার ৫০০ টন নদীতে মিশে যায়। অনেক ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের অবশেষ বর্জ্য শোধনাগারে পরিশোধিত হওয়ার পরও নদীর পানিতে মিশে যাচ্ছে।
গবেষণার প্রধান লেখক ও ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হেলোইজা এহাল্ট মাচেডো বলেন, প্রতিটি অ্যান্টিবায়োটিকের অবশেষ খুবই অল্প পরিমাণে নদীতে মেশে, ফলে এগুলো শনাক্ত করাও কঠিন। তবে এসব রাসায়নিকের দীর্ঘমেয়াদি ও ধারাবাহিক উপস্থিতি মানবস্বাস্থ্য ও জলজ পরিবেশের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
আরও ভালোভাবে বিষয়টি বিশ্লেষণের জন্য গবেষক দল একটি বৈশ্বিক মডেল ব্যবহার করেছে। মডেলটি প্রায় ৯০০টি নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সংগৃহীত তথ্য দিয়ে যাচাই করা হয়েছে।
এতে দেখা গেছে, ‘বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক অ্যামক্সিসিলিন নদীর পানিতে ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রায় থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, যেখানে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বাড়ছে এবং বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা সীমিত। তাই এসব অঞ্চলের নদীতে সমস্যাটি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
গবেষণার সহলেখক ও ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক বার্নহার্ড লেহনার বলেন, ‘এ গবেষণার উদ্দেশ্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা দেওয়া নয়। কারণ, বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক অত্যাবশ্যক। আমাদের গবেষণার ফলাফল বলছে, অজান্তেই এসব ওষুধ জলজ পরিবেশ ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই প্রতিকারমূলক ও সঠিক ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রয়োগ জরুরি।’
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন