ছবি - সংগৃহীত
বাজারে সয়াবিন তেল নিয়ে নানামুখী কারসাজি চলছে। অভিযোগ রয়েছে, পরিশোধনকারী মিল মালিকরা তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী আরেক দফা দাম বাড়াতে না পেরে এই কারসাজি শুরু করছেন। তারা বাজারে ভোজ্যতেল, বিশেষ করে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। রমজানের আগে বেশি মুনাফার আশায় বাজারে এক ধরনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে।
দেশে এক মাসের বেশি সময় ধরে ভোজ্য তেল সয়াবিনের বাজার অস্থির। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম শুধু যে বেড়েছে তা-ই নয়, চাহিদা মতো বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে ভোক্তারা বিপাকে পড়েছেন। রাজধানীর প্রতিটি খুচরা বাজারে এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে। এদিকে পবিত্র রমজান শুরু হতে আর বেশি দেরি নেই। ফলে সয়াবিনের বাজারের এই অস্থিরতা ভোক্তদেরকে মারাত্মকভাবে ভোগাবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গত তিন মাসে দেশে যে পরিমাণ অপরিশোধিত সয়াবিন ও সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে, তা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া, যথেষ্ট পরিমাণে সয়াবিন ও পামঅয়েল আমদানির জন্য পাইপলাইনে রয়েছে। তাহলে বাজারে সয়াবিনের এই সংকট থাকার কথা নয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারেও এখন সয়াবিন, পাম অয়েলের বাজার স্থিতিশীল। অনেকটা কমতির দিকে। তাহলে বাংলাদেশে কেন দাম বাড়বে?
পরিসংখ্যান বলছে, দেশে যথেষ্ট পরিমাণে ভোজ্য তেল আমদানি হয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় বেশি। কোম্পানিগুলোও বলছে, সয়াবিন সরবরাহে কোনো সমস্যা নেই। তাহলে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট হবে কেন? কেউ অসৎ উদ্দেশ্যে সয়াবিন তেল মজুত করছে কিনা সরকারকে তা খতিয়ে দেখতে হবে।
দেশে প্রতি বছর ভোজ্য তেলের চাহিদা ২৩ থেকে ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে আড়াই লাখ টন তেল দেশে উৎপাদিত হয়। বাকি ২০ থেকে ২১ লাখ টন আমদানি করা হয়। এর মধ্যে রমজান মাসেই চাহিদা ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টন থাকে।
দেশের ১১টি প্রতিষ্ঠান ভোজ্যতেল আমদানি করে। তবে সবগুলো প্রতিষ্ঠান সক্রিয় নেই। ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার পেছনে রয়েছে মূলত পাঁচটি পরিশোধনকারী কারখানার সিন্ডিকেট। তারাই ঠিক করে দেয় বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কত হবে। ভোজ্য তেল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি করে সিটি গ্রুপ। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে টি.কে গ্রুপ। তৃতীয় অবস্থানে মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ ও বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড। ভোজ্যতেলের বাজারের নিয়ন্ত্রণ মূলত এদের হাতেই জিম্মি।
প্রতি বছরই মিল মালিকরা রমজানের আগে তেলের দাম বাড়ানোর জন্য একই কাজ করে। পাইকারি, ডিলার ও খুচরাবাজারে সয়াবিনের সরবরাহ কমিয়ে এক ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। পরে দাম বাড়িয়ে দেয়। এবারও মিল মালিকরা একই পথে হাঁটছেন।
সরকার ২০২৩ সালে ঘোষণা করেছিল—‘বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করা যাবে না। সব ধরনের ভোজ্যতেল, বিশেষ করে সয়াবিন তেল বিক্রি করতে হবে প্যাকেটজাত করে। এর কোনও বিকল্প চলবে না।’ সরকারের সেই সিদ্ধান্ত আজও বাস্তবায়ন হয়নি। ব্যবসায়ীরা কেউই মানছেন না। ফলে বাজারে বিক্রি হচ্ছে খোলা ড্রামজাত সয়াবিন তেল। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই খোলা সয়াবিন তেল মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। দাম কম হওয়ায় অনেকেই বোতলজাত সয়াবিন কিনে থাকে। এখনও সারা দেশের হাটবাজার,পাড়ামহল্লার মুদি দোকানে অহরহ খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমানে ক্রেতারা বোতলজাত সয়াবিন তেল পাচ্ছেন না। একই অবস্থা খোলা সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রেও। সুযোগ বুঝে একশ্রেণির ব্যবসায়ী লাগামহীনভাবে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে সয়াবিনের বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। অস্থিরতা কমাতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
আই.কে.জে/