ছবি: সংগৃহীত
শীতের কনকনে ঠাণ্ডা কেটে যখন প্রকৃতি নতুন পাতায়, নতুন ফুলে সাজে, তখন বাংলাদেশের পোশাকেও যেন ফুটে ওঠে রঙিন প্রাণ। বসন্তের ফ্যাশনে দেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাক থেকে শুরু করে আধুনিক ডিজাইনের মিশেলে তৈরি হয় এক অনন্য স্টাইল। তাই বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে বাজার ছেয়ে যাচ্ছে রঙিন সব পোশাকে। সেই সঙ্গে ফেসবুকে যারা পোশাক বিক্রি করেন, তারাও বিভিন্ন রকম পোশাক নিয়ে আসছেন ক্যামেরার সামনে। জেনে নিন এ বছরের পোশাকের চল-
বসন্ত ফ্যাশনে বাংলার ঐতিহ্য
ফাগুনে পোশাকের ডিজাইনে রয়েছে বাংলার প্রকৃতি ও সংস্কৃতি। বসন্তের ফ্যাশনে প্রধান আকর্ষণ হলো ফুলের নকশা, হালকা রঙের সমাহার, সুতি ও মসলিনের মতো প্রাকৃতিক সুতায় তৈরি পোশাক। বাসন্তী, গেরুয়া, কমলা রঙের পাশাপাশি ইদানীং মিষ্টি গোলাপি, পিচ, মিন্ট গ্রিন, আকাশি নীলের মতো শেডগুলো বসন্তের পোশাকে বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। তাঁত, জামদানি, মসলিন এবং সুতি কাপড়ের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে বেশি। বসন্তে নারীরা সাধারণত হালকা সুতির শাড়ি, তাঁত, জামদানি ঘরানার শাড়ি পরতে পছন্দ করেন। ফুলের নকশা ও রঙিন শাড়ি এই ঋতুর জন্য আদর্শ। সালোয়ার-কামিজেও দেখা যায় সেসব রঙের ব্যবহার এবং ফুলের প্রিন্ট। পুরুষদের জন্য পাঞ্জাবি, বিশেষ করে সুতি বা লিনেনের তৈরি হালকা রঙের পাঞ্জাবি বসন্তে বেশ জনপ্রিয়। এগুলো পরতে যেমন আরামদায়ক, দেখতেও মনে হয় উৎসবের পোশাক।
আরো পড়ুন : কর্মজীবী নারীর সাজ-পোশাক
আধুনিক বসন্ত ট্রেন্ডস
বাংলাদেশের ফ্যাশন ডিজাইনাররা বসন্তের ফ্যাশনে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটাচ্ছেন। ফিউশন ওয়্যার, যেমন ক্রপ টপের সাথে শাড়ির স্কার্ট বা এমব্রয়ডারি করা লিনেন জ্যাকেট এখন তরুণদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও, পরিবেশবান্ধব ফ্যাশনের প্রতি ঝুঁকেছেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। অর্গানিক সুতি, প্রাকৃতিক রং এবং হস্তশিল্পের ছোঁয়া এখন ফ্যাশনের একটি বড় অনুসঙ্গ। বসন্তের ফ্যাশনে স্টেটমেন্ট জুয়েলারি, পাটের ব্যাগ এবং ফুলের হেয়ারপিনও জায়গা করে নিয়েছে বাঙালির পছন্দের তালিকায়। কাপড়ের প্রিন্টে এসেছে নতুনত্ব। ফুলেল প্রিন্টের পাশাপাশি সুতি গজ কাপড়ে স্থান পেয়েছে রিকশা, চায়ের কাপ, ক্যাকটাস, পুতুল, সিএনজি, বিখ্যাত ছবি, এমনকি স্লোগানও!
বসন্ত ফ্যাশনে বাংলাদেশের টেক্সটাইল
বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্প বিশ্বব্যাপী পরিচিত। বসন্তের ফ্যাশনে সুতি, জামদানি এবং মসলিনের মতো কাপড়ের ব্যবহার বিশেষভাবে লক্ষণীয়। সুতি কাপড় গরমে আরামদায়ক এবং সহজে বহনযোগ্য। জামদানি এখন কেবল শাড়িই নয়, কুর্তায়ও ব্যবহার হচ্ছে। মসলিন তার নম্রতা ও টেকসই গুণের কারণে বসন্তের পোশাক হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
বসন্ত ফ্যাশনের ইভেন্ট
বসন্তে বাংলাদেশে বিভিন্ন ফ্যাশন শো এবং ইভেন্টের আয়োজন করা হয়। ঢাকা অ্যাপারেল সামিট এবং বাংলাদেশ ফ্যাশন উইকের মতো ইভেন্টগুলোতে স্থানীয় ডিজাইনারদের সৃজনশীলতা এবং টেক্সটাইলের বৈচিত্র্য তুলে ধরা হয়।
বসন্তের ফ্যাশন বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও প্রকৃতির সাথে গভীরভাবে জড়িত। জামদানি শাড়ির চিরায়ত সৌন্দর্য থেকে শুরু করে ফিউশন ওয়্যারের আধুনিকতা, বসন্ত ফ্যাশন সবার জন্য কিছু না কিছু উপহার নিয়ে আসে। এই ঋতুতে আপনার ওয়ারড্রবকে সাজান টেকসই ও স্টাইলিশ পোশাকে, আর উপভোগ করুন বসন্তের আবহ।
এস/ আই.কে.জে/