রবিবার, ৮ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রতিস্থাপিত জরায়ু থেকে প্রথম শিশুর জন্ম, ইতিহাস গড়ল ব্রিটেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০২:০৯ পূর্বাহ্ন, ২২শে এপ্রিল ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

ব্রিটেনে প্রতিস্থাপন করা জরায়ু থেকে প্রথমবারের মতো এক শিশুর জন্ম হয়েছে। ওই নবজাতকের খালা তার মাকে জরায়ু দান করেছিলেন। খালার নামানুসারে কন্যাশিশুটির নাম রাখা হয়েছে অ্যামি। লন্ডনের কুইন শার্লটস অ্যান্ড চেলসিয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খবরটি এএফপিকে নিশ্চিত করেছে।

ওই হাসপাতালে গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি অ্যামি নামের ওই মেয়েশিশুটির জন্ম হয়। তার মায়ের নাম গ্রেস ডেভিডসন। দুই বছর আগে গ্রেসের শরীরে তার বড় বোনের জরায়ু প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল।

নবজাতকের জন্ম দেওয়া গ্রেস ডেভিডসন বলেন, ‘এ যাবৎকালে চাওয়া সবচেয়ে বড় উপহারটি আমরা পেয়েছি।’ গ্রেসের আশা, ভবিষ্যতে সন্তান ধারণে অক্ষম নারীদের জন্য এটি একটি বিকল্প উপায় হয়ে উঠবে।

বার্তা সংস্থা প্রেস অ্যাসোসিয়েশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শিশুটির বাবা অ্যাঙ্গাস ডেভিডসন বলেন, ‘অ্যামিকে সত্যিকার অর্থে পাওয়ার এ যাত্রায় যারা আমাদের সাহায্য করেছেন, তাদের নিয়ে কক্ষটি পরিপূর্ণ হয়ে ছিল। সম্ভবত ১০ বছর ধরে আমাদের আবেগ-অনুভূতি একরকম চাপা অবস্থায় ছিল। আর সেটার প্রকাশ কেমন হতে পারে, তা আপনার জানার কথা নয়। তা হাউমাউ কান্না হয়ে বের হয়ে এসেছে।’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, গ্রেস ডেভিডসনের বয়স ৩৬ বছর। রোকিটানস্কি-কাস্টার হাউসার নামে পরিচিত একটি বিরল শারীরিক জটিলতা আছে তার। জন্মের সময় থেকেই তার জরায়ুটি নিষ্ক্রিয় ছিল।

গ্রেস ব্রিটেনের প্রথম নারী, যার শরীরে জরায়ু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তার ৪২ বছর বয়সী বোন অ্যামি পার্ডি তাকে জরায়ুটি দান করেছিলেন। অ্যামির ১০ ও ৬ বছর বয়সী দুটি মেয়ে আছে।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে অক্সফোর্ড ট্রান্সপ্লান্ট সেন্টারে জরায়ুটি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। অক্সফোর্ড ট্রান্সপ্লান্ট সেন্টার অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি হসপিটালস ফাউন্ডেশনের অংশ।

বিবিসি ২১শে এপ্রিল এক প্রতিবেদনে জানায়, জন্মের সময় শিশু অ্যামির ওজন ছিল মাত্র ২ কেজি। প্রথমবার মেয়েকে কোলে নেওয়ার অভিজ্ঞতা ‘অবিশ্বাস্য ও স্বপ্নের মতো’ বলে মন্তব্য করেন গ্রেস। তিনি বলেন, ‘আমরা কখনো কল্পনাই করিনি, সে এভাবে আমাদের জীবনে আসবে। এটা সত্যিই এক অসাধারণ অনুভূতি।’

গ্রেস ও তার স্বামী অ্যাঙ্গাস ডেভিডসন বর্তমানে উত্তর লন্ডনে থাকলেও তাদের বাড়ি স্কটল্যান্ডে। তারা ভবিষ্যতে এ প্রতিস্থাপিত জরায়ু ব্যবহার করে দ্বিতীয় সন্তানের পরিকল্পনাও করছেন। সন্তান জন্মের পর তারা নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করেন এবং তাদের এ ‘অলৌকিক শিশুর’ গল্পটি বিবিসিকে জানান।

গ্রেসের জন্ম হয়েছিল মেয়ার-রোকিটানস্কি-কুস্টার-হাউসার (এমআরকেএইচ সিনড্রোম) সিনড্রোম নিয়ে। এ বিরল রোগে জরায়ু অনুপস্থিত বা অপরিণত হলেও ডিম্বাশয় সচল থাকে। ২০১৮ সালে গ্রেস প্রথম এ বিষয়ে বিবিসির সঙ্গে কথা বলেন। তখন তার মা গর্ভদান করতে চাইলেও তা উপযুক্ত ছিল না।

পরে ২০১৯ সালে তার বড় বোন অ্যামি গ্রেসকে গর্ভদানের সিদ্ধান্ত নেন। অ্যামি দুই সন্তানের জননী এবং তার আর সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না। অস্ত্রোপচারের আগে দুই বোনের কাউন্সেলিং হয় এবং গ্রেস-অ্যাঙ্গাস দম্পতি ফার্টিলিটি ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে কয়েকটি ভ্রূণ সংরক্ষণ করেন।

তবে কোভিডের কারণে এ অস্ত্রোপচার কয়েক বছর পিছিয়ে যায়। অবশেষে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৩০ জনের বেশি চিকিৎসকের একটি দল ১৭ ঘণ্টা ধরে অ্যামির গর্ভ অপসারণ এবং গ্রেসের শরীরে প্রতিস্থাপন করেন।

২০১৪ সালে সুইডেনে প্রথম জরায়ু প্রতিস্থাপনে সন্তানের জন্ম হয়। এরপর আমেরিকা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত ও তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশে অন্তত ১৩৫টি সফল জরায়ু প্রতিস্থাপিত হয়েছে এবং এর থেকে জন্ম হয়েছে ৬৫টির বেশি শিশু।

এইচ.এস/

জরায়ু প্রতিস্থাপন

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন