কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়া এক প্রকার দুর্ঘটনার শিকার হয়েই ৮ হাজার মিটার ওপরে উঠে গিয়েও জীবিত ফিরে এসেছেন চীনের প্যারাগ্লাইডার পেং ইউজিয়াং। প্রচণ্ড ঠান্ডা, অক্সিজেন স্বল্পতা ও বিপজ্জনক উচ্চতায় উঠে যাওয়ার পরও তিনি শেষমেশ নিরাপদে ভূমিতে নামতে সক্ষম হন। তবে অনুমতি ছাড়া এ ফ্লাইট পরিচালনার দায়ে তাকে ৬ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এসব তথ্য জানিয়েছে।
চীনের গানসু প্রদেশের ছিলিয়ান পর্বতমালায় প্রায় ৩ হাজার মিটার উচ্চতা থেকে পেং ইউজিয়াং যাত্রা শুরু করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল একটি নতুন কেনা সেকেন্ড হ্যান্ড প্যারাগ্লাইডিং সরঞ্জাম পরীক্ষা করা—ফ্লাইট দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা তার ছিল না। কিন্তু যাত্রা শুরুর প্রায় ২০ মিনিট পর তিনি একটি প্রচণ্ড ঊর্ধ্বমুখী বায়ুপ্রবাহে (আপড্রাফট) আটকা পড়ে আরও ৫ হাজার মিটার ওপরে উঠে যান। এতে তার মোট উচ্চতা দাঁড়ায় প্রায় ৮ হাজার মিটার—যা নিয়মিত বিমান চলাচলের উচ্চতা এবং এভারেস্টের চূড়ার উচ্চতার কাছাকাছি।
পেংয়ের হেলমেটে লাগানো ক্যামেরার ভিডিতে দেখা যায়, তিনি মেঘের ওপরে অবস্থান করছেন এবং তার দেহ বরফে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। ধারণা করা হয়, সে সময় তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরে ভূমিতে নিরাপদে অবতরণ করে এক ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘আমার হাত জমে গিয়েছিল। আমি বারবার রেডিওতে কথা বলার চেষ্টা করছিলাম।’
স্থানীয় ক্রীড়া কর্তৃপক্ষ এ ঘটনাকে ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবে বিবেচনা করেছে। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, একজন সাধারণ মানুষ অক্সিজেন ছাড়া ৮ হাজার মিটারে টিকে থাকতে পারে না। এটি স্বেচ্ছায় করা সম্ভব নয়। তবে পেং একজন অভিজ্ঞ প্যারাগ্লাইডার। তার প্যারাগ্লাইডিংয়ের অভিজ্ঞতা দীর্ঘ ৫ বছরের। তাই অভিজ্ঞতা কাজে খাঁটিয়ে টিকে ছিলেন পেং। কিন্তু যেহেতু পেং ফ্লাইটের কোনো পরিকল্পনা জমা দেননি এবং অনুমতি ছাড়াই যন্ত্র পরীক্ষা করছিলেন, তাই তার এ উড্ডয়ন ‘প্রাসঙ্গিক অনুমোদনের আওতায়’ ছিল না।
তদন্তে আরও বলা হয়, পেং প্রায় এক ঘণ্টা আকাশে ছিলেন এবং নিচে থাকা তার বন্ধু গু ঝিমিনের সঙ্গে রেডিও যোগাযোগ রাখছিলেন। তিনি নিচে নামার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু উচ্চতা কমাতে ব্যর্থ হন এবং প্রচণ্ড ঠান্ডা ও দুশ্চিন্তায় একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়েন। শেষমেশ তিনি যাত্রা শুরুর স্থান থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবতরণ করতে সক্ষম হন।
পরে গু ঝিমিন এ অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতার ভিডিও এবং ভূমিতে নামার পর পেংয়ের কিছু মন্তব্য ডৌইনে (চীনা টিকটক হিসেবে পরিচিত) পোস্ট করেন। স্বাভাবিকভাবেই মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায় ওই ভিডিও। তার এ কীর্তি রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছে নেট জগতের বাসিন্দাদের।
ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন পেং। তবে অনুমতি না নিয়ে এমন বিপজ্জনক উড্ডয়ন করায় কর্তৃপক্ষের নিন্দার মুখেও পড়তে হয়েছে তাকে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, `গু ঝিমিন অনুমতি ছাড়া ভিডিও পোস্ট করেছেন, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।’ তাকেও ছয় মাসের জন্য প্যারাগ্লাইডিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তাকে আত্মসমালোচনামূলক একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
অনেকে বলছেন, পেংয়ের আগে কেউ অক্সিজেন ছাড়া এত ওপরে উঠতে পারেননি। ফলে পেং একটি বিশ্ব রেকর্ড করেছেন। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে—এ ফ্লাইট নিবন্ধিত না থাকায় এটি কোনো আনুষ্ঠানিক রেকর্ড হিসেবে গণ্য করা হবে না।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে জার্মান প্যারাগ্লাইডার এভা উইস্নিয়ার্সকা অস্ট্রেলিয়ায় অনুরূপ এক ঊর্ধ্বমুখী বায়ুপ্রবাহে আটকা পড়ে ৯ হাজার ৯৪৬ মিটার উচ্চতায় উঠেছিলেন, যা এখনো পর্যন্ত বিশ্বের সর্বোচ্চ প্যারাগ্লাইডিং ফ্লাইটের রেকর্ড হিসেবে স্বীকৃত।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন