শিকড়ের টানে শ্রিংলা

উপ-সম্পাদকীয়
🕒 প্রকাশ: ০৫:৩৯ অপরাহ্ন, ৫ই মার্চ ২০২৪

রজত ভরদ্বাজ মুখার্জী :
“কোন পুরাতন প্রাণের টানে, ছুটেছে মন মাটির পানে।”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা এই বিখ্যাত গানের কলি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, যদি আলেখ্যের বিষয়বস্তু হয় সদ্য প্রাক্তন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার স্বভূমে প্রত্যাবর্তন। ক্রিকেটের বরপুত্র যদি শচীন হন, ফুটবলের রাজপুত্র হিসেবে যদি সমগ্র বিশ্ব মেসিকে চেনেন, তাহলে ভারতবর্ষের সর্বকালীন অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ ও সফল কূটনীতিক সংশয়াতীত ভাবেই আমাদের শিলিগুড়ি তথা দার্জিলিংয়ের ভূমিপুত্র হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। প্রধানমন্ত্রী মোদীর অত্যন্ত আস্থাভাজন এই কূটনীতিককে মোদীজী রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠান বিশ্বের প্রবলতম শক্তিধর রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তাঁর দৌত্যে ভারত-আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্ক লাভ করে অনন্য এক উচ্চতা। অভাবনীয় এই সাফল্যে আহ্লাদিত প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার স্বরূপ তাঁকে অর্পণ করেন দেশের পররাষ্ট্র সচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব যা পদমর্যাদা বলে পররাষ্ট্র দপ্তরের সর্বোচ্চ দায়িত্ব।
এখানেও ব্যত্যয় ঘটেনি, বরং বলাই বাহুল্য যে নতুন দায়িত্বভার গ্রহণের অব্যবহিত পরেপরেই আবার নজর কাড়লেন হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমাতেই স্থাপন করলেন একটার পর একটা নতুন মাইলফলক। তাঁর এবং বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর জীর ধ্রুপদী যুগলবন্দী ভারতবর্ষকে বিশ্বের দরবারে গৌরবান্বিত করেছে একবার নয় দুবার নয়, বলা ভালো অসংখ্যবার। প্রণিধানযোগ্য যে সামগ্রিক ক্ষেত্রে বিশ্বের মানচিত্রে ক্রমশ উজ্জ্বলতর হয়ে প্রকাশিত হওয়া পরিবর্তিত ভারতবর্ষের পরিবর্তনের ভগীরথ যদি নরেন্দ্র মোদী হন, তাহলে অগ্রগতির এই যাত্রাপথে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দুই পার্শ্বচর হলেন জয়শঙ্কর জী ও শ্রিংলা জী।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, শ্রিংলা জী বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডেও ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব নির্বাহ করেছেন। রাষ্ট্রদূত হিসেবে বাংলাদেশে তাঁর কার্যকাল আজও সে দেশের মানুষের স্মৃতিতে গাঁথা রয়েছে। সকলের সাথে অনায়াস দক্ষতায় তাঁর মিলে মিশে যাওয়ার ভূমিসংলগ্ন মানসিকতা আজও আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতিবেশীদের কাছে বিরল এক সুখস্মরণিকা। বাংলাদেশের বরিশালে তাঁর নামে একটি রাস্তার নামকরণ শ্রিংলা জীর অসামান্য জনপ্রিয়তার স্বপক্ষে এক প্রামাণ্য দলিল।
আমরা সম্যক অবগত যে পশ্চিমবঙ্গ-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বেশ কিছু রাজ্য বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী। সীমান্তের কাঁটাতার প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্রকে দ্বিধাবিভক্ত করে রাখলেও ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে ভারতের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত আবশ্যক। দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে আজকের যে সম্পর্কের উষ্ণতা স্থাপিত হয়েছে তাতেও শ্রিংলা জীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
গত বছর (২০২৩) জি-২০-র মতো বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজক দেশ ছিল আমাদের ভারত, যা আজও আমাদের স্মৃতিতে ভাস্বর। হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ইত্যবসরে তাঁর সরকারি কর্মজীবন সাঙ্গ করে অবসর গ্রহণ করেছেন। কিন্তু অবসর নিলে কী হবে, তাঁর মতো গুণী কূটনীতিবিদকে ছুটি দিচ্ছে টা কে? মোদীজী তো আর সহজে ছাড়নেওয়ালা পাত্র নন। এ ব্যাপারে শ্রিংলাজী নিজেও বিলক্ষণ ওয়াকিবহাল। যথা প্রত্যাশিত জি-২০-র মুখ্য সংযোজকের দায়িত্ব ন্যস্ত হল মোদীজীর অত্যন্ত আস্থাভাজন ও বিশ্বস্ত সেনাপতি হর্ষবর্ধনের ওপর। অগত্যা দেশমাতৃকার হাতছানিতে সাড়া দিতেই হলো আদ্যন্ত মোদী অনুরাগী সদ্যপ্রাক্তন বিদেশ সচিবকে। আশৈশব দেশমাতৃকার সেবার্থে নিয়োজিত প্রাণ শ্রিংলা ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকাকে যথাসম্ভব ঊচ্চে তুলে ধরার মহান অর্ঘে ব্রতী হয়ে গ্রহণ করলেন এই প্রবল গুরুত্বপূর্ণ কার্যভার। প্রতিজ্ঞা করলেন দাঁতে দাঁত চেপে যে প্রথমবারের তরে ভারতের পবিত্র মাটিতে আয়োজিত এই হাই ভোল্টেজ গ্র্যান্ড ইভেন্টকে এনে দিতে হবে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা। সাজিয়ে তুললেন গোটা অনুষ্ঠানটিকে অস্ফুট এক পদ্মের একেকটি পাপড়ি ধরে ধরে, পরম স্নেহে পরিচর্যায় ও মমত্ববোধে। ভারতের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই মেগা ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক সহ বিশ্বের তাবড় তাবড় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ। স্বাভাবিকভাবেই গোটা বিশ্বের শ্যেন দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত ছিল ভারতের পানে। যার ফলশ্রুতি আবার ভারতের বিশ্বজয় এবং বিশ্বগুরু হয়ে ওঠার পথে আরও এক ধাপ অগ্রগতি। এক্ষেত্রে বলাই বাহুল্য যে জি-২০-র গগনচুম্বী ঐতিহাসিক সাফল্য বিশ্বের দরবারে এ বার্তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয় যে, “ভারত আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে”।
আগাগোড়া কৃতী ছাত্র শ্রিংলা জীর কর্মজীবনে আত্মপ্রকাশ ঘটে ব্রুক বন্ডের মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে। তাঁর পরবর্তী কর্মস্থল এয়ার ইন্ডিয়া নামক বিমান সংস্থা। এরপর তিনি ১৯৮৪ সালে সর্বভারতীয় আইসিএস পরীক্ষায় ১৫তম স্থান অর্জন করেন এবং ভারত সরকারের অধীনস্থ বিদেশ বিভাগে চাকুরিতে যোগ দেন। বাকিটুকু ইতিহাস। একজন পেশাদার কূটনীতিক হিসেবে শ্রী শ্রিংলা মারণ কোভিড অতিমারী সংক্রান্ত সংকট, ভারত-চীন সীমান্তবর্তী বেলাগাম দ্বৈরথ, অপ্রত্যাশিতভাবে আফগানিস্তানে তালিবান সরকারের প্রতিষ্ঠা এবং মায়ানমারের সামরিক শাসনের মতো অগণিত বিদেশ নীতির সমস্যাগুলি অনায়াস দক্ষতায় মোকাবিলা করেছেন।
এ হেন মানবতার মূর্ত প্রতীক শিলিগুড়ির ভূমিপুত্র হর্ষবর্ধন শ্রিংলার স্বভূমে প্রত্যাবর্তন একজন শিলিগুড়িবাসী হিসেবে আমাদের গর্বিত করে বৈকি। দার্জিলিং ও শিলিগুড়িতে তাঁদের পৈতৃক নিবাস থাকলেও শিলিগুড়িতে তৈরি করে ফেলেছেন আরও একটি নিবাস যা হতে চলেছে আজীবনের তরে তাঁর স্থায়ী ঠিকানা। অবসর গ্রহণের অব্যবহিত পর থেকেই তিনি ছুটে চলেছেন দার্জিলিং জেলার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত নিরলস নিরন্তর শুধুই মানবকল্যাণের মহান অর্ঘ্যে ব্রতী হয়ে। মানুষের প্রয়োজনে, বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ানোর অভ্যেস তাঁর মজ্জাগত। এক একান্ত আলাপচারিতায় তিনি জানান যে, দরিদ্র দুস্থ আর্তদের সেবা করার মধ্যে দিয়ে তিনি এক অনির্বচণীয় তৃপ্তি খুঁজে পান। সে কারণেই তিনি এতদিন রাষ্ট্রের সেবা করলেও এখন তিনি মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করতে চান।
সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণে আগ্রহী কিনা জানতে চাওয়া হলে পরম ঈশ্বরবাদী প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব সহাস্য বদনে জানান, “এসব চিন্তাভাবনা এখন কালের গর্ভে, আপাতত তেমন কোনও পরিকল্পনা নেই। তাছাড়া মানুষ কখনোই নিজের ভবিষ্যতের নিয়ন্তা হতে পারেন না, সবটাই ঈশ্বরের ইচ্ছে”। তিনি কি সঠিক উত্তর দিলেন? নাকি এখানেও সেই চিরাচরিত ডিপ্লোমেসি? এই উত্তরটাও অন্তর্নিহিত আছে কালের গর্ভে।
(লেখক : পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির বিদেশ সম্পর্ক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান)
আই. কে. জে/
খবরটি শেয়ার করুন

দেশে বড় ধরনের সহিংস অপরাধের সংখ্যা বাড়েনি, দাবি প্রেস উইংয়ের
🕒 প্রকাশ: ০৫:৪৯ অপরাহ্ন, ১৪ই জুলাই ২০২৫

নৌকাবাইচে গলুইয়ে দাঁড়িয়ে নাচ, ভাইরাল বালক পেল ‘পর্যটন দূত’ খেতাব
🕒 প্রকাশ: ০৫:০০ অপরাহ্ন, ১৪ই জুলাই ২০২৫

সাপের বিষ মেশানো কফি!
🕒 প্রকাশ: ০৪:৪৩ অপরাহ্ন, ১৪ই জুলাই ২০২৫

বাবার মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব পড়ে সন্তানের বিকাশে
🕒 প্রকাশ: ০৪:৩২ অপরাহ্ন, ১৪ই জুলাই ২০২৫

প্রস্তাবিত ‘মানবিক শহর’ হবে ফিলিস্তিনিদের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প: ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী
🕒 প্রকাশ: ০৪:১৬ অপরাহ্ন, ১৪ই জুলাই ২০২৫