ইব্রাহীম খলিল জুয়েল
বাংলাদেশে লোকসংখ্যা আসলে কত? সরকারিভাবে ১৭/১৮ কোটি বলা হয়। অনানুষ্ঠানিকভাবে কেউ ১৯/২০ কোটি বলেন। একজন সচেতন নাগরিক সেদিন বলছিলেন, যদি নতুন করে আদমশুমারি করা হয় এবং একজন লোকও গণনা থেকে বাদ না যায়, তাহলে বাংলাদেশের লোকসংখ্যা হবে কমপক্ষে ২২ কোটি। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যুক্ত হয়েছে প্রায় পনের লাখ। এই সম্ভাব্য পরিসংখ্যানটির অবতারণা এ জন্য যে, দেশে এতো মানুষ সত্ত্বেও মাছ-মাংসের কোনো অভাব নেই। দাম নিয়ে অনেক বিতর্ক-সমালোচনা আছে। কিন্তু বাজারে জোগান নিয়ে প্রশ্ন নেই। দামের বিষয়টি সিন্ডিকেটের কারসাজি বলে প্রতিনিয়ত অনেক অভিযোগ শোনা যায়। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও সীমিত জমির মধ্যে বাংলাদেশ কৃষিতে দৃশ্যমান সাফল্য অর্জন করেছে।
বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন গত এক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাছ ও মাংস উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন একটি আরামদায়ক বা কমফোর্টেবল অবস্থানে রয়েছে। এটি সরকারকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে স্বস্তি এনে দিয়েছে।
জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও)-এর দ্য স্টেট অফ ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার রিপোর্ট-২০২৪ অনুসারে, বাংলাদেশ স্বাদুপানি বা মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। উক্ত সময়ে বাংলাদেশ ১.৩২ মিলিয়ন টন (১৩.২২ লাখ টন) স্বাদুপানির মাছ উৎপাদন করেছে, যা বৈশ্বিক উৎপাদনের ১১.৭ শতাংশ। বিশেষ করে গত দুই বছরে ইলিশ, পাঙ্গাস, বোয়াল এবং আইড়ের মতো প্রজাতির সম্প্রসারিত উৎপাদনের কারণে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
সরকারি পদক্ষেপের কারণে ইলিশ উৎপাদনেও বাংলাদেশ ১১টি দেশের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে।
২০০২-০৩ মৌসুমে, ইলিশের উৎপাদন ১.৯৯ লাখ টনে নেমে আসে, যা দেশব্যাপী মাছের সংকট তৈরি করে। ফলে সরকার ২০০৪ সালে জাটকা মাছ সংরক্ষণের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০২২-২৩ মৌসুমে ইলিশের উৎপাদন ৫.৭১ লাখ মেট্রিক টনে পৌঁছেছে, যা বাংলাদেশের মোট মাছ উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ।
এফএও-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী ক্রাস্টেসিয়ান (কাঁকড়া এবং চিংড়ি) উৎপাদনে ৮ম, উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মাছ উৎপাদনে ১৪তম এবং তেলাপিয়া উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে রয়েছে।
সরকারের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৫ লাখ টন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৮৫ লাখ টন মাছ উৎপাদনের।
২০২৩-২৪ মৌসুমে মাছের উৎপাদন ছিল ৫০.২ লাখ টন।
মাথাপিছু দৈনিক গড় মাছ খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭.৮ গ্রাম, যা দৈনিক মাথাপিছু চাহিদা ৬০ গ্রাম ছাড়িয়ে গেছে।
এদিকে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, গত এক দশকে গবাদি পশুর উৎপাদনও ২৪ শতাংশ বেড়ে ৪.৫৩ কোটি পশুতে পৌঁছেছে। গত এক দশকে গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগলের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাংসের চাহিদা ছিল ৭৬.২১ লাখ মেট্রিক টন, যেখানে উৎপাদন ছিল ৯২.২৫ লাখ মেট্রিক টন।
তবে দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে বাংলাদেশকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। ২০২৩-২৪ সালে, দুধের চাহিদা ছিল ১৫৮.৭৮ লাখ মেট্রিক টন, যেখানে দেশে উৎপাদন হয়েছিল ১৫০.৪৪ লাখ মেট্রিক টন।
পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ খাদ্য আমদানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল থাকলেও পর্যায়ক্রমে এই নির্ভরশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
আই.কে.জে/