অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী শুক্রবার (১৩ই জুন) লন্ডনে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এ বৈঠক জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে সরকার ও দলের মধ্যে বিদ্যমান দূরত্ব কমাতে সাহায্য করবে। বিএনপির নেতারাও বৈঠকটিকে নির্বাচন নিয়ে চলমান অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখছেন।
গত সোমবার (৯ই জুন) ব্রিটেনে যাওয়ার আগে গত শুক্রবার (৬ই জুন) জাতির উদ্দেশ্যে ঈদুল আজহার ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে বিএনপি এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে অনড়। দলটির মতে, সংস্কারগুলো এর অনেক আগেই বাস্তবায়ন সম্ভব।
প্রধান উপদেষ্টার ব্রিটেন সফরের ঘোষণা আসার পর থেকেই ইউনূস ও তারেকের সম্ভাব্য বৈঠক নিয়ে জল্পনা বাড়তে থাকে, যদিও বৈঠকটি তার (ড. ইউনূসের) অফিসিয়াল কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত ছিল না। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, তারেক হয়তো ইউনূসকে নির্বাচনের তারিখ এগিয়ে আনার জন্য অনুরোধ করতে পারেন। তাদের যুক্তি হলো, এপ্রিল মাস নির্বাচনী প্রচারণার জন্য উপযুক্ত নয়, কারণ রোজা মার্চের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হবে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, 'বৈঠকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি রাজনৈতিক আলোচনা অবশ্যই হবে। আমরা আশা করি, প্রধান উপদেষ্টা তার (নির্বাচনের তারিখ সম্পর্কিত) সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন ও দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করবেন।'
তিনি বলেন, 'নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় নির্ধারণের সময় তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) আবহাওয়া, রমজান মাস এবং পাবলিক পরীক্ষার মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করতে পারেন। এছাড়াও, জাতীয় নিরাপত্তা, রাজনীতি এবং বৃহত্তর জাতীয় প্রেক্ষাপট সম্পর্কিত আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হবে।' সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য বিএনপির কিছু পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবও রয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সম্ভাব্য বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছেন এবং তারেক রহমানকে দলের পক্ষে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা দিয়েছেন। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের এক বৈঠকে তারা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা সম্পর্কে অবহিত করেছেন।
সূত্রমতে, খালেদা জিয়া তাদের বলেছেন, 'বিতর্ক নয়, নির্বাচন প্রয়োজন। সংঘর্ষ এড়িয়ে চলাই ভালো।' নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য এ বক্তব্যকে দলের জন্য একটি বার্তা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন— তীব্র সংঘাতে না গিয়ে আলোচনার পথ খোলা রাখা উচিত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও প্রধান উপদেষ্টা ও তারেক রহমানের বৈঠককে ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, সরাসরি আলাপচারিতা বিএনপি ও অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে আস্থার ঘাটতি কমাতে পারে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়ে বিএনপির কঠোর অবস্থানকে কিছুটা নমনীয় করতেও সহায়ক হতে পারে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী তারেক রহমান এবং মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যকার বৈঠককে 'অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ' আখ্যা দেন। 'এ বৈঠক ভুল বোঝাবুঝি নিরসন, রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা এবং উত্তেজনা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে,' তিনি বলেন।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন