রবিবার, ৮ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৫শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রশাসন কেন কঠোর নয়?

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৬:০১ অপরাহ্ন, ২২শে মে ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

রবি হক

প্রকাশ্যে নারীদের নির্যাতন ও লাঞ্ছনার হার আশংকাজনকভাবে বাড়ছে। গত ৯ই মে মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে দুই তরুণীকে মারধরের ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওযার পর নৌ পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টর নিজে বাদী হয়ে মামলা করেন এবং একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ভিডিওতে দুই তরুণীকে প্রকাশ্যে নির্যাতন করতে দেখা গেছে। এক যুবক পিটাচ্ছিলেন, তার সঙ্গে আরো অনেকে ছিলেন। তাদের কেউ কেউ সেই দৃশ্য মুঠোফোনে ভিডিও করছিলেন, কেউ কেউ আবার ‘মার, মার’ বলে হাততালি দিচ্ছিলেন। ওই দুই তরুণী লঞ্চঘাটের একটি দোকানে কিছু কিনতে গেলে কয়েক তরুণ তাদের পোশাক নিয়ে ‘আপত্তিকর’ কথা বলেন। তারা প্রতিবাদ করে লঞ্চে ওঠার জন্য লঞ্চের দিকে এগিয়ে গেলে এক তরুণ বেল্ট দিয়ে দুই তরুণীকে পেটান। 

একপর্যায়ে তারা ভয়ে লঞ্চের ভেতরে চলে যান। ওই তরুণের সঙ্গে আরো ২০-২৫ জন ছিলেন। ওই লঞ্চে প্রায় ৪০০ যাত্রী থাকলেও কেউ প্রতিবাদের সাহস পাননি। কারণ, হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তি নিজেকে স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দেন। যার কারণে পুলিশও ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যবস্থা নিতে সাহস পায়নি।

গত ২৪শে সেপ্টেম্বর দেশের সর্ববৃহৎ পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দুই নারীকে হয়রানি ও মারধরের  ভিডিও ভাইরাল হয়। তাদের ‘পোশাক খারাপ’ বলে একদল যুবক মারধর করে। পরে মাধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। তারপর পুলিশ একজনকে আটক করে।

গত নয় মাসে নারীদের লাঞ্ছিত করার অনেক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ২২শে ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার লাহারকান্দি এলাকায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দুই নারীকে প্রকাশ্যে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। ওই দৃশ্য ভিডিও করা হয় এবং পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ তৎপর হয়। 

কিন্তু এর আগেই নির্যাতনকারীরা গা-ঢাকা  দেন। ২রা এপ্রিল ঢাকার বনশ্রী এলাকায় এক নারী সাংবাদিককে রাত ৮টার দিকে প্রকাশ্যে মারধর ও যৌন হয়রানি করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে একদিন পর চারজনকে আটক করে পুলিশ। ১৪ই এপ্রিল বাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের সড়ক বাজারে জনসমক্ষে দুই নারীর মাথার চুল জোরপূর্বক কেটে দেওয়া হয়। 

ওই দুই নারীকে প্লাস্টিকের পাইপ ও রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। ৫ই মে কুষ্টিয়ায় এক নারী চিকিৎসককে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে রিকশা থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে প্রকাশ্যে মারধর করা হয়। তার স্বামীও ওই হামলা থেকে রেহাই পাননি। ৬ই মে কুড়িগ্রামের উলিপুরে গ্রাম্য সালিসে ‘অনৈতিক সম্পর্কের’ অপবাদ দিয়ে এক নারীর চুল কেটে দেওয়া হয়।

অপরাধীরা এসব ঘটনা ঘটিয়ে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে, ঘটনাগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর প্রশাসন একটু নড়েচড়ে বসে। তাছাড়া প্রশাসন সাধারণত এগিয়ে আসে না। তাদের মধ্যেও এক অজানা আতঙ্ক কাজ করছে। 

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)-এর হিসাব অনুযায়ী এপ্রিল মাসে ৩৬২টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ৯৩টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ২৫টি, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা চারটি। ধর্ষণের চেষ্টা ৩৩টি, যৌন হয়রানি ২৬টি, শারীরিক নির্যাতনের ৪৭টি ঘটনা ঘটেছে। এ সংখ্যার বাইরেও আরো অনেক ঘটনা আছে। যারা লোকলজ্জার ভয়ে প্রকাশ করেন না, নিরবে সহ্য করেন।

সমাজে নারীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করুক, একশ্রেণির মানুষ চায় না। তাই তারা প্রকাশ্যে ও রাস্তায় জনসমাগম স্থলে ঠুনকো অজুহাতে নারীর ওপর হামলা চালাচ্ছে। হামলার সময় অনেকে প্রতিরোধে এগিয়েও আসছেন না। পুলিশ থাকলেও তারা নির্বিকার থাকেন। ফলে নারী বিদ্বেষীরা দিনদিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছেন।

এইচ.এস/


নারী নির্যাতন

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন