ছবি: দ্য ভার্জ
অনলাইন বিজ্ঞাপন প্রযুক্তিতে প্রভাব খাঁটিয়ে প্রতিযোগিতা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গুগলকে ২ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ইউরো বা ২৯৫ কোটি ইউরো জরিমানা করেছে ইউরোপীয় কমিশন। আর এ ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তথ্যসূত্র বিবিসি।
এক ঘোষণায় গতকাল শুক্রবার (৫ই সেপ্টেম্বর) ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী সংস্থা জানায়, অনলাইন বিজ্ঞাপনের স্থান নির্ধারণ এবং কনটেন্ট নির্বাচনসংক্রান্ত বিজ্ঞাপন প্রযুক্তিতে নিজেদের পণ্যকে অন্যদের চেয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রতিযোগিতায় বাধা দিয়েছে গুগল।
গুগলের বিরুদ্ধে এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৃতীয় বড় জরিমানা। এর আগে ২০১৮ সালে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে বাজারে প্রাধান্য বিস্তার করার অভিযোগে ৪ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ইউরো বা ৪৩৪ কোটি ডলার জরিমানা করা হয়েছিল।
এই রায়কে ‘ভুল’ আখ্যা দিয়ে গুগল জানিয়েছে, তারা এর বিরুদ্ধে আপিল করবে। গুগলের গ্লোবাল রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স প্রধান লি-অ্যান মুলহল্যান্ড বিবিসিকে বলেন, ‘এই জরিমানা অযৌক্তিক এবং প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো ইউরোপের হাজার হাজার ব্যবসার আয়–রোজগার কঠিন করে তুলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিজ্ঞাপন ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জন্য সেবা প্রদান করা কোনো প্রতিযোগিতাবিরোধী কাজ হয় না এবং এখন আমাদের সেবার বিকল্প অনেক বেশি রয়েছে।’
এদিকে জরিমানার বিষয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে বলেন, এ সিদ্ধান্ত ‘অত্যন্ত অন্যায্য’ এবং ইউরোপের প্রযুক্তি খাতের চর্চা নিয়ে তদন্ত শুরু করার হুমকি দেন, যা শুল্ক আরোপের পথও খুলে দিতে পারে।
ট্রাম্প লেখেন, ‘আমি আগেও বলেছি, আমার প্রশাসন এসব বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ সহ্য করবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবিলম্বে এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে!’
উল্লেখ্য, এর আগে আমেরিকার প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর একাধিকবার জরিমানা আরোপ ও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের বারবার সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প।
ইউরোপীয় কমিশনের শুক্রবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গুগল নিজেদের বিজ্ঞাপন এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্ম এডিএক্সকে ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এতে করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্ল্যাটফর্ম ও প্রকাশকেরা বেশি খরচে বিজ্ঞাপন চালাতে বাধ্য হন, যার প্রভাব ভোক্তাদের ওপর পড়েছে বলে দাবি করেছে কমিশন।
ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের দায়ে গুগলের ৪২ কোটি ৫০ লাখ ডলার জরিমানা ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের দায়ে গুগলের ৪২ কোটি ৫০ লাখ ডলার জরিমানা
ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট টেরেসা রিবেরা বলেন, ‘গুগল এর আগেও প্রতিযোগিতা আইন ভেঙেছে, সেটা বিবেচনায় নিয়েই এবার জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, গুগলকে ৬০ দিনের মধ্যে জানাতে হবে তারা কীভাবে নিজেদের কার্যক্রমে পরিবর্তন আনবে, না হলে কমিশন নিজেরাই সমাধান চাপিয়ে দেবে।
তার মতে, ‘বর্তমানে মনে হচ্ছে, গুগলের স্বার্থের সংঘাত দূর করার একমাত্র কার্যকর উপায় হচ্ছে গুগলের বিজ্ঞাপন প্রযুক্তি ব্যবসার কোনো একটি অংশ বিক্রি করে দেওয়া।’
ইউরোপের নিয়ন্ত্রকদের মতে, গুগলের স্বজনপ্রীতির কারণে প্রতিদ্বন্দ্বীরা বাজারে টিকে থাকতে পারছে না, প্রকাশকেরা কম আয় পাচ্ছেন এবং ব্যবহারকারীরা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ অবস্থায় জরিমানার পাশাপাশি ব্যবসায়িক কাঠামোতেও পরিবর্তনের চাপ বাড়ছে গুগলের ওপর।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন